
প্রবাহ রিপোর্ট : খুলনা ও বরিশালের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি ও নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা। সেই সাথে জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তির্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। রাস্তাঘাট ও নদী তীরবর্তী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পানি ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। ডুবছে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, মাছের ঘের, আবাদি জমি। পাশাপাশি ভাটায় নদীর পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিচ্ছে ভাঙন।
জানা যায়, খুলনার পাইকগাছার চকরি বকরি বদ্ধ জলমহলের দক্ষিণ পাশ ভেঙে আবারও তিনটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর এ এলাকাটি তিনবার ভাঙনের কবলে পড়ে। শুক্রবার প্রবল জোয়ারের পানির চাপে জলমহলের দক্ষিণ পাশ ভেঙে যায়। এতে পারমধুখালী, চকরি বকরি ও গেওয়াবুনিয়া গ্রাম প্লাবিত হয়। কাঁচা ঘর বাড়ি, ফসলের ক্ষেত, পুকুর ও চিংড়ি ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর এ নিয়ে তিনবার ভাঙনের কবলে পড়লো এলাকাটি। অমাবশ্যার জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাইকগাছার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে ভাঙনের পাশাপাশি ওয়াপদা ছাপিয়ে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গত বুধবার থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার গড়ইখালীর গুচ্ছগ্রাম, বুধ ও বৃহস্পতিবার সোলাদানার বেতবুনিয়া গুচ্ছগ্রামসহ তিনটি এলাকা, গদাইপুর ইউনিয়নের কচুবুনিয়া এলাকা ও লতা ইউনিয়নের একটি এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, গত তিন দিনে অমাবশ্যার জোয়ারের পানিতে উপজেলার ৪ ইউনিয়নের সাতটি স্থানে ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে ও ওয়াপদার ভেড়িবাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে মৎস্য ঘের, ফসলের ক্ষেত ও কাঁচা বাড়ি-ঘর। বেতবুনিয়ার আবাসন প্রকল্পের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানির মধ্যে বসবাস করছে। উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নে বেতবুনিয়া আবাসন ও গুচ্ছগ্রাম পানিতে থৈ থৈ করছে। একই ইউনিয়নের টেংরামারী ও ভাঙ্গা হাড়িয়ার ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে বুধবার ৫ হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে ফসল ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বাঁধ মেরামত করলেও টেকসই বাঁধের দাবি জানিয়েছেন সোলাদনা ইউপি চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হক, দেলুটি চেয়ারম্যানরা রিপন কুমার ম-ল ও গড়ইখালী ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বিশ্বাস।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী সরেজমিনে পরিদর্শন করে সার্বিক খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে বরিশাল নগরের রসুলপুর এলাকার বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারও বিকেল ৩টা থেকে কীর্তনখোলা নদীর পানি একটু একটু করে খাল ও ড্রেন হয়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক ও এলাকায় প্রবেশ করে। এতে সব শ্রেণির মানুষ দুর্ভোগ পোহালেও বেশি বিপদে পড়েছেন গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের কাঁচা চুলা ভিজে যাওয়ায় রান্নাও বন্ধ হয়ে গেছে। আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।
নগরের সদররোডের বাসিন্দা টিপু সুলতান বলেন, এবারে শহরে এমন কিছু এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকেছে বিগত সময়ে সেখানে কখনো পানি ঢুকতে দেখিনি। আবার নিম্নাঞ্চলগুলোতেও পানির উচ্চতা বিগত দিনের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। বরিশাল সদর উপজেলার বাসিন্দা রাসেল হোসেন জানান, জোয়ার শুরু হওয়ার পর প্রতি মুহূর্তে পাল্টে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকার দৃশ্য। প্রথমে নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে, এরপর যেখান থেকে সুযোগ পাচ্ছে, ভাঙা বাঁধ, নয়তো রাস্তা দিয়ে পানি গ্রামের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে এবং বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাচ্ছে। এতে মানুষের ভোগান্তি চরমে গিয়ে ঠেকেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে চাচ্ছে না।