
লঘুচাপে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি
আজাদুল হক, বাগেরহাট
সাগরে লঘুচাপ ও বিরামহীন বৃষ্টিতে অস্বাভাবিক পানি বেড়ে যাওয়ায় উপকুলীয় জেলা বাগেরহাটের শরনখোলা ও চিতলমারী উপজেলায় বাজারসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শত শত পরিবার পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে শরণখোলা উপজেলার বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসকারী প্রায় ৬০০ পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পনি বেড়েছে ৩/৪ ফুট। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে. শরনখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসকারী স্খানীয় বলেশ্বর নদী পাড়ের রাজৈর মারকাজ মসজিদ থেকে বান্দাঘাটা পর্যস্ত ৩০০ পরিবার এবং সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, তেড়াবেকা, পানিরঘাট, সোনাতলা ও খুড়িয়াখালী গ্রামের ২৮০ পরিবার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
রাজৈর গ্রামের আঃ হাকিম হাওলাদার বলেন, জোয়ারের পানি তার ঘরের মধ্যে দুই ফুট পর্যন্ত হয়েছে। বগী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী হাওলাদার জানান, সকাল-সন্ধ্যা দুইবার জোয়ারে ডুবতে হয় তাদের। কোনোরকম দুর্যোগ বা জোয়ারের পানি একটু বাড়লেই ঘরে বসবাসের কোনো উপায় থাকে না।
খোন্তাকাটা ইউপির রাজৈর ওয়ার্ডের মেম্বর মোঃ আব্দুর রহিম হাওলাদার বলেন, স্থানীয় কিছু লোকের খামখেয়ালী ও অপরিকল্পিত বেড়িবাধ নির্মানের কারণে এখন জোয়ারে ডুবছে ৩০০ পরিবার। রায়েন্দা খালের পাড় থেকে বেড়িবাঁধটি নির্মান করা হলে এই পরিবারগুলো রক্ষা পেত।
সাউথখালী ইউপি’র বগী ওয়ার্ড সদস্য মোঃ রিয়াদুল পঞ্চায়েত জানান, আকাশে মেঘ দেখলেই সাউথখালীর এই পাঁচ গ্রামের মানুষ আতঙ্কি হয়ে পড়ে। নদীর কাছাকাছি বাঁধের বাইরে থাকা এসব ভূমিহীন ও নি¤œ আয়ের মানুষের সারা বছরই ঝড়-জলোচ্ছাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে মানবেতর দিন কাটে। এসব পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
এদিকে, চিতলমারী উপজেলার চিত্রানদীর জোয়ারের প¬ানিতে প্লাবিত হয়েছে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বাখেরগঞ্জ বাজারের দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ সময় চিতলমারী ও বাগেরহাট সদর উপজেলা সীমানার প্রায় ১৫টি গ্রাম প্লাাবিত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে গবাদি পশুর খাবার, মাছ, ক্ষেতের সবজিসহ অন্যান্য জিনিস। মাছের ঘের তলিয়ে গেছে অসংখ্য মাছ চাষির। বসত বাড়িতে পানিবন্দি রয়েছে মানুষ।
বাখেরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়িরা জানান, বৃহস্পতিবার, শুক্র ও শনিবারের জোয়ারে চিত্রানদীতে ৩-৪ ফুটের অধিক পানি বেড়েছে। পানির চাপ মূলতঃ বাগেরহাট সদরের ভৈরব নদী থেকে এসেছে। ওই এলাকার ডাক্তার সেকেন্দার আলী, চিত্ত, প্রদীপ কুমার. গোবিন্দ ও কেরামত আলী বলেন, তাদের ৩ পুরুষেও চিতলমারী উপজেলায় এতো পানি দেখেননি। এ অবস্থার মধ্যে পড়া মানুষদের খোজ খবর নিতে শনিবার পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধিকে কাছে পায়নি বলেও জানান তারা।
সন্তোষপুর গ্রামের নিত্যানন্দ মজুমদার বলেন, ‘হঠাৎ করে জোয়ারের গতি বেড়ে যায়। বাড়ীর উঠান ডুবে এখন ঘরের ভিতরেও জল উঠে গেছে। বাখেরগঞ্জ বাজারের পাশে ১৯৯০ সালে নির্মিত ¯¬ুইচ গেটে জোয়ারের পানি বাঁধাগ্রস্থ হয়ে ফুলে উঠে আশ-পাশের বাজার, গ্রাম সহ গোটা এলাকা প্ল¬াবিত হচ্ছে।’ জুড়ান মন্ডল জানান, গত বছর এলাকার নদী খাল কাটায় সহজেই দ্রত গতিতে পানি এসে চিতলমারী উপজেলার বাখরগঞ্জ বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ রায়গ্রাম, শুড়িগাতী, চৌদ্দ হাজারী, সাড়ে চারআনি, সন্তোষপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
অপরদিকে বাগেরহাট সদর উপজেলার মান্দ্রা, হালিশহর, খালিশপুর, আলিপুর, নাসিরপুর বেমরতা ইউনিয়নের ভদ্রপাড়া গ্রাম জোয়ারে প্ল-াবিত হয়ে গেছে। ভুক্তভোগি অতিশ অধিকারী বাপ্পানী জানান, বাখেরগঞ্জ বাজারে তার ১৬টি ঘর, একটি রাইসমিল ও তিনটি সমিল ডুবে গেছে। এতে তার প্রায় নয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। চিতলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল জানান, চিতলমারী-বাগেরহাট প্রধান সড়কের উপরেও সন্তোষপুর এলাকায় পানি উঠে গেছে। গোদাড়া হতে বাখেরগঞ্জ পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডেও যতগুলো স্লু¬ইচগেট আছে, তা উন্নয়ন কাজের জন্য বন্ধ রয়েছে। এতে পানির গতি বাঁধাগ্রস্থ হয়ে ফুলে উঠে আশেপাশের গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। সমস্যাটি নিরসনের চেষ্টা চলছে। চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মারুফুল আলম জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। দ্রত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পানি বৃদ্দিতে এবং জলবদ্ধতার কারনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করতে কৃষি অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তর কাজ করছে