
মোঃ আশিকুর রহমান, ৪নং ওয়ার্ড প্রতিনিধিঃ নগরীর দৌলতপুর থানাধীন ৪নং ওয়ার্ড দেয়ানা উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ইকলাস মোল্লার ছেলে ইজিবাইক চালক টুটুল মোল্লার হত্যা মামলাটি ঝিমিয়ে পড়েছে। এতে করে পরিবারের সদস্যরা ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। একই সাথে তারা পুলিশের ভূমিকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
নিহতের স্বজনরা জানান, প্রতিদিনের ন্যায় ৬ আগষ্ট বিকালে ইজিবাইক নিয়ে বের হয় টুটুল মোল্লা। রাত্র ৯ টা নাগাদ তাকে স্থানীয় মুচিপাড়া মোড়ে দেখা যায়। রাতে বাড়ী ফেরার কথা থাকলেও সে বাড়ী ফেরেনি। পরের দিন সকালে টুটুলের খোজে বের হয় স্বজনেরা। তার স্বজনরা সম্ভব্য সকল স্থানে খোজার পর না পেয়ে থানা পুর্লিশের সরণাপন্ন হন। এ ব্যাপারে জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাসির জানান, ৭ আগষ্ট রাত্রেই দৌলতপুর থানা হতে সকল থানার ওসিবৃন্দের নিকট বেতারবার্তা যোগে টুটুলের নিখোজের বিষয়টি প্রেরণ করা হয়। পরে টুটুলের লাশ পাওয়া যায়। উদ্ধার করা হয় তার ইজিবাইকটা। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হরিণটানা থানার এসআই রাসেল বলেন, গত ৬ আগষ্ট রাত্র ১২টার দিকে হরিনটানা থানাধীন এলাকায় মোবাইল ডিডটি অফিসার এসঅআই রহমত ও পেট্রোল ডিউটি অফিসার এসআই জয়দেবসহ সঙ্গীয় ফোর্স সিটি বাইবাসের জয়বাংলা মোড় ও মোস্তোর মোড়ের মাঝামাঝি টহলরত অবস্থায় অচেতন গুরুতর অবস্থায় অজ্ঞাত যুবক দেখতে পায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। পরে নিহতের পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়া হয়। ইজিবাইক চালক টুটুলের এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ছোট ভাই রাজিব (২২) বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে হরিনটানা থানায় মামলা করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাসেল হোসাইন বিশেষ অভিযান চালিয়ে খালিশপুর বিআইডাব্লিউ রোডস্থ আলমনগর পোড়া মসজিদ এলাকা হতে রবিউল ইসলাম রাজু (২০), রাকিব হোসেন রকি (২২) এবং বাগেরহাট সদর থানার লিচুতলা হতে সাদ্দাম হাওলাদার (৩০) কে ১১ আগষ্ট গ্রেফতার করে। আটককৃত ৩ আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১২ আগষ্ট আদালতে প্রেরণ করে বলে জানিয়েছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ সময় আসামীরা আদালতের নিকট ১৬৪ ধারায় (স্বীকারোক্তী মূলক জবানবন্দি) দেওয়ার সম্মতি দেবে বলে আবেদন করা হয়। এর মধ্য চোরাই ইজিবাইক ক্রেতা সাদ্দাম হাওলাদার স্বীকারোক্তী মূলক জবানবন্দী দিলেও বাকী দুইজন জবান বন্দী দেয়নি। হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ বাকী দ্ইু আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করার সুযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারণে তা করা হয়নি। উল্টো মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেছেন, ১৬৪ ধারা আবেদন করার পর ওই আসামী স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দী না দিলেও তাকে রিমান্ডের আবেদন করার কোন সুযোগ নেই। তবে এ ঘটনায় নতুন আসামী গ্রেফতার করতে পারলে তাকে রিমান্ডে নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, নিহতের উদ্ধারকৃত ইজিবাইকটি আইনি প্রক্রিয়া শেষে শীঘ্রই নিহতের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে। এ বিষয়ে এ্যাড. আব্দুল মান্নান বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি প্রয়োজন মনে করেন তবে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করতে পারেন। এতে আইনি কোন বাধা নেই। নিহতের স্বজন কাঞ্চন হতাশ প্রকাশ করে জানান, আমি আর আমার ভাগ্নে (অর্থ্যাৎ মামলার বাদী) রাজিব ১৯ আগস্ট সন্ধ্যায় হরিনটানা থানায় হাজির হয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে ইজিবাইক ফেরৎ ও আসামীদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আপনারা ইজিবাইক ফেরৎ পাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করুন, আদালত আদেশ দিলে আপনাদের ইজিবাইক ফেরৎ দেওয়া হবে। তবে আসামীদের দেখতে চাইলে এবং বাদীদের না জানিয়ে চালান দেওয়া হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, এটা মাডার কেস পানি যত ঘোলাবেন, পরিবেশ তত ঘোলাটে হবে। তাছাড়া এ বিষয়ে বেশি ঢাক ঢোল পিটিয়ে কাজ নেয়, যা আপনাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে করে আসামীদ্বয় সহজে খালাস পেয়ে যেতে পারে। নিহতের পরিবার মনে করছে ক্রমশ এই হত্যা মামলা যেন ঝিমিয়ে যাচ্ছে। তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার কথ্য়া চরম হতাশ হয়েছেন বলে জানান।